সমুদ্রের তলদেশে ভয়ঙ্কর ৩ টি স্থান

 টিভিতে ওয়াইফাই সংযোগ করা সমুদ্রের তলদেশে প্রায় ২০ লাখ প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ এর বসবাস রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার প্রজাতি সম্পর্কে এ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন।

সমুদ্রের তলদেশে ভয়ঙ্কর ৩ টি স্থান
তবে একটা প্রশ্ন সব সময় থেকেই যাই, তাহলে বাকি প্রজাতির প্রাণী উদ্ভিদ সমুদ্রে কোন অংশে লুকিয়ে থাকে। আর এই প্রশ্নের উত্তর সমুদ্রের ওইসব অংশে লুকিয়ে আছে, যেখানে এখনো কোনো মানুষের পা বা আধুনিক সভ্যতার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কোন পদার্পণ পড়েনি। মানুষ এই মহাবিশ্ব সম্পর্কে যতটা না জানে, সমুদ্র সম্পর্কে ঠিক তার ততটাই কম জানে। 

কারণ আজ পর্যন্ত এমন কোন আবিষ্কার আবিষ্কৃত হয়নি সমুদ্রের নির্দিষ্ট কিছু অংশ পৌঁছাই এবং সেই বিষয়ে পর্যাপ্ত কেন বা বিশ্লেষণ প্রকাশ পায়। মহাবিশ্ব যতটা না রহস্যময় তার কয়েক গুণ বেশি রহস্যময় সমুদ্রের তলদেশ। ধারণা করা যায় যে, সমুদ্রের তলদেশের চেয়ে মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মানচিত্র সম্পর্কে আমরা বেশি জানি। আজকের এই আলোচনায় আমরা জানবো জলের রাশির তলদেশের রহস্য ঘেরা দশটি শীর্ষস্থান সম্পর্কে_

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল

এ পৃথিবীতে সমুদ্রের তলদেশে এমন একটি জায়গা রয়েছে যেখানে একবার ভুল করে গেলে কোনদিনও আর ফিরে আসতে পারবেন না। বা ফিরে আসা অসম্ভব বলেই ধারণা করা হয়। সেই ভয়ংকর স্থানটি হল আটলান্টিক মহাসাগরে থাকা ত্রিভুজ আকৃতির একটি স্থান যার নাম বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এই ত্রিভুজ আকৃতির বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের সত্যিকার অর্থের আয়তন আজ পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞানের ধারণা করতে পারেননি।

 আর এই কারণেই প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ যাহার এবং এয়ারপ্লেন এখানেই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। যার সেই ধ্বংসাবশেষ এর অবশিষ্ট অংশ অবদি পাওয়া যায় না। সবাই ধারণা করেন যে, এখানে ভৌতিক কোন কিছুর অবস্থান রয়েছ্‌ বা এখানে সমুদ্রের দানব বাস করে যার ফলে এখানে এত ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। আর এসব কারণেই সমুদ্রের এই অংশকে সমুদ্রের সবচেয়ে রহস্যময় এবং বিপদজনক বা ভয়ঙ্কর বলে অভিহিত করা হয়।

রস সি আইস শেলফ

রস সি আইস শেলফ

বিশ্বের সবচেয়ে বড় আইস সেলফ টি রস সাগরে (আটলান্টিক দক্ষিণ মহাসাগরের একটি গভীর উপসাগর) অবস্থিত। সাহসী গবেষকদের অল্প কয়েকটি দল হেই উপসাগরের কয়েকশো মিটার খনন করতে সক্ষম হয়েছেন এবং এর তলদেশের অজানা এবং অচেনা প্রজাতির কিছু প্রাণের সন্ধান পেয়েছেন। যার মধ্যে, উল্লেখযোগ্য হল= মাছ, কাঁকড়া ও চিংড়ির মত খোলস যুক্ত প্রাণী।

 বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে রহস্যময় উপায়ে এই প্রাণীগুলো টিকে থাকা জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপরে যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে। বিজ্ঞানীরা আরো মনে করেন যে, আটলান্টিক অঞ্চলের আইস সেলফ ফ গুলোর পরিবেশ বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ ইউরোপের মতো এবং এ থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়, পৃথিবীর বাইরে ওই ধরনের শীতল পরিবেশে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে।

মারিয়ানা ট্রান্স


প্রকৃতির রহস্য সব সময় মানুষকে বেশ উদ্বুদ্ধভাবে ভাবিয়েছে। কৌতুহলী মানুষ সেই রহস্য উন্মোচনের নেশায় হাজারো বাধার সম্মুখীন হয়েও সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছেন এবং হচ্ছেন। তার মধ্যে একটি হলো, সমুদ্রের তলদেশের মারিয়ানা ট্রান্স নামের এক অজানা রহস্যকে উন্মোচন করতে। মারিয়ানা ট্রেনস হল সমুদ্রের সেই স্থান, যাকে সমুদ্রের সবচেয়ে বিপদজনক স্থান হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। 

মানুষের অজানাকে জানার ইচ্ছাই মানুষ মহাকাশ থেকে শুরু করে সমুদ্রের ভয়ংকর তলদেশ কোন কিছুই বাদ দেয়নি। আর সেরকমই একটি স্থান হল মারিয়ানা ট্রেন্স, যা সমুদ্রের সবচেয়ে গভীরতম স্থান। মারিয়ানা ট্রেন্স যে নামটির সাথে জড়িয়ে আছে এক অসীম রহস্যময়তা, যা রহস্য ভেদ করতে কৌতুহলী মানুষ অপেক্ষা করেছেন মৃত্যুর হাতছানি। আজ আমরা মারিয়ানার ট্রেন্স সম্পর্কে জানব-


সপ্তদশ শতাব্দীতে পেনিসরা প্রশান্ত মহাসাগরে তাদের কলোনি স্থাপন করেন।। এরপর স্পেনের রাজা চতুর্থ ফিলিপানি, মারিয়ানা নামের এই দ্বীপপুঞ্জের নাম স্থাপন করেন। সেই থেকে এই দ্বীপপুঞ্জের নাম মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ। মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ থেকে ২০০ কিলোমিটার পূর্বে পৃথিবীর গভীরতম সমুদ্রের স্থানের অবস্থান।

 মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের নাম অনুসারে এই স্থানের নামকরণ করা হয় মারিয়ানা ট্রেন্স। ধারণা করা যায় যে, প্রশান্ত মহাসাগরের জলরাশির নিচে থাকা দুটি টেকটানিক প্লেটের সংঘর্ষের কারণে একটি প্লেট আরেকটি প্লেটের নিচে চলে যায়। আর এই থেকেই সৃষ্টি হয় পৃথিবীর গভীরতম খাত এই মারিয়ানার ট্রান্স নামের খ্যাত। মারিয়ানা ট্রেন্স দৈর্ঘ্যে .২৫৫০ কিলোমিটার বিস্তৃত হলেও এর প্রশস্ত মাত্র ৬৯ কিলোমিটার। ১৮৭৫ সালে ব্রিটিশ জাহাজ এইচএমএস চ্যালেঞ্জার, প্রথম মারিয়ানা ট্রেনসের অবস্থান সনাক্ত করেন। এরপরেই নিকটবর্তী মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের নাম অনুসারে সেই স্থানের নাম মারিয়ানার ট্রেনস করা হয়।

সমুদ্রের তলদেশের গভীরতা

আমাদের পৃথিবীর উচ্চতম স্থান হল মাউন্ট এভারেস্ট এবং আমাদের পৃথিবীর গভীরতম স্থান হলো মারিয়ানা ট্রেন্স। প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের কাছে অবস্থিত এই খাদটি এতটাই গভীরতম যে সম্পূর্ণ মাউন্ট এভারেস্ট কে এর মধ্যে তুলে দেওয়ার পরেও ২১০০ মিটার খালি থেকে যাবে। এই থেকেই ধারণা করা যায় সমুদ্রের গভীরতা কতটা এবং কতটা অজানা। সমুদ্রের তলদেশ এতটাই রহস্যময় যে এর এক এক মিটার নিচে একেকটা রহস্য ঘেরা থাকে।

উপসংহার

বিশাল নীল জলরাশির অতল সমুদ্র তলদেশে হাজারো ভয়ঙ্কর এবং রহস্যময় স্থান লুকিয়ে আছে। যা সব হয়তো আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে যে স্থানগুলো সম্পর্কে আমাদের ধারণা রয়েছে সেগুলোই কম কিসের। মারিয়ানা ট্রান্স, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এবং জলপথ ড্রেক প্যাসেজ এর মতো ভয়ঙ্কর স্থান। এগুলো যতটা না ভয়ংকর তার বেশি রহস্যময়। বর্তমান সময়ের বিজ্ঞানীরা এসব রহস্যময় এবং ভয়ংকর স্থান নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, যা আমাদের আগামী প্রজন্ম হয়তো জ্ঞান আরোপ করতে পারবে।




ধন্যবাদ                   ,
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url