আম গাছের যত্ন ও পরিচর্যা করা
আম অনেকদিন সংরক্ষণ করে রাখার উপায় আম খেতে কে না পছন্দ করেন, কিন্তু আম খাওয়ার পর আম গাছে যত্ন নিতে আমরা সবাই ভুলে যাই। এটা মনে রাখতে হবে যে, যে গাছ থেকে আমরা এত সুস্বাদু আম পায় সেই গাছেরও পরিচর্যার ও যত্নের প্রয়োজন আছে.
আম গাছের পুষ্টি, বৃদ্ধি এবং ভালো ফলন পাওয়ার জন্য নানা ধরনের জৈব সার এবং রাসায়নিক কীটনাশক রয়েছে, যেগুলি গাছের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আম গাছের জন্য জৈব সার যেমন-গোবর এবং বিভিন্ন ধরনের কম্পোস্ট সারের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি উপযোগী। গাছের বৃদ্ধি এবং উচ্চমাত্রায় ফলন বাড়াতে বছরে কমপক্ষে দুইবার এই জৈব সার এবং কম্পোস্ট সার দিতে হবে। এছাড়াও গাছের গোড়ার মাটি নিয়মিত গাছের গোড়ায় সেচ করতে হবে। অবশ্যই সার প্রয়োগের সময় গাছের বয়স এবং মাটির ধরন অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে। তাহলে চলুন আজ আমরা গাছের যত্ন এবং পরিচর্যা সম্পর্কে আলোচনা করি-
আম গাছের জন্য সার প্রয়োগ পদ্ধতি
আম গাছের বৃদ্ধি এবং অধিক ফলনের আশায় কৃষকের পরিশ্রমের শেষ নেই। পরিশ্রমের পাশাপাশি যদি আম গাছে প্রয়োজন অনুযায়ী সার এবং কীটনাশক না ব্যবহার করা হয় তাহলে অধিক ফলন পাওয়া অসম্ভব। আম গাছে সার প্রয়োগের সময় অবশ্যই গাছের বয়স এবং মাটির উর্বরতার উপর নির্ভর করে সার প্রয়োগ করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ আমের আচার দীর্ঘদিন সংরক্ষণের উপায়
সার প্রয়োগ করার সময় প্রতি গাছ থেকে গাছের দূরত্ব 8 থেকে 10 মিটার রাখতে হবে। যে স্থানে গাছ রোপন করা হবে সেই স্থানে প্রতি পিস গাছের জন্য গোবর সারের পরিমাণ ২২ কেজি, ইউরিয়া সারের পরিমাণ ১৫০ গ্রাম, টিএসপি সারের পরিমাণ ৫৫০ গ্রাম, এমওপি জিংক সালফেট সারের পরিমাণ ৬০ গ্রা্ম করে প্রয়োগ করতে হবে। গর্ত ভর্তির ১০-১৫ দিন পর চারার গুড়ার মাটির বলসহ গর্তের মাঝখানে ভালোভাবে রোপণ করতে হবে। এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ প্রয়োগ করতে হবে।
আম গাছের জন্য কোন সার উত্তম?
অধিক ফলন পাওয়ার আশায় কৃষকেরা নানা ধরনের সার প্রয়োগ করে থাকে। তবে আম গাছের বয়স এবং মাটির উর্বরতা অনুযায়ী আম গাছের গোড়ায় সার ব্যবহার করা হয়। আম গাছে প্রথম বছরে প্রতি পিস গাছের জন্য ১৬০ গ্রাম ইউরিয়া, সিঙ্গেল সুপার ফসফেট ও ১২৫ গ্রাম মিউরিয়েট অফ পটাশ ব্যবহার করতে হবে। একই সঙ্গে প্রতি বছর গাছের বয়স গুণ করে প্রতি বছর সার এর পরিমাণ বাড়াতে হবে। অর্থাৎ ১০ বছরের গাছ হলে ইউরিয়া সার ১৬০০ গ্রাম, সিঙ্গেল সুপার ফসফেট ২৫০০ গ্রাম এবং মিউরিয়েট অফ পটাশ ১২৫০ গ্রাম করে প্রয়োগ করতে হবে।
আম গাছের মুকুল আসার সময় কোন সারের প্রয়োগ করতে হয়?
আমের মুকুল আশার ৭-১০ দিনের মধ্যে অথবা মুকুলের দৈর্ঘ্য এক থেকে দেড় ইঞ্চি হলে(অবশ্যই ফুল ফোটে যাবার আগে) আমের হপার পোকা দমনের জন্য ইমিডাইক্লোপ্রিড ( ইমিটাফ,টিডো,কনফিডার) ৭০ ডব্লিউ জি বা অন্য নামের অনুমোদিত কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ০.২ গ্রাম হারে অথবা সাইপারমেথ্রিন ( রেলোথ্রিন,কত,রিপকর্ড) ১০ ইসি বা অন্য নামের কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
আম গাছে মুকুল আসার জন্য কি করতে হয়?
গাছে মুকুল আশার আগে গাছের গোড়া থেকে পাতা পর্যন্ত ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। ভিজে দেওয়ার পরে উপরোক্ত দুটি কীটনাশক একই সঙ্গে মিশিয়ে গাছে প্রয়োগ করতে হবে। মুকুল আসবে কিন্তু ফুল ফুটবে না এমন অবস্থায় আরেকবার স্প্রে করতে হবে। আমের গুটি মটর দানার মত হলে শেষ বারের মতো ওই কীটনাশকী স্প্রে করতে হবে। আম গাছে মুকুল আসার সময় হকার পোকা অংশের রস চুষে খায়। পরবর্তীতে হকার পোকা দমনের জন্য আরেকবার স্প্রে করতে হবে।
আম গাছের পরিচর্যা কিভাবে করতে হয়?
আম গাছের অধিক ফলনের জন্য অবশ্যই গাছের যত্ন এবং পরিচর্যার প্রয়োজন। তবে এই পরিচর্যা হতে হবে অবশ্যই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক। গাছের বৃদ্ধির জন্য সার, পানি, আলো এবং পোকামাকড় থেকে সুরক্ষার মত বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোন কোন ধাপে আম গাছের পরিচর্যা করা হয় চলুন জেনে নেওয়া যাক-
- আম গাছের বৃদ্ধি এবং ভালো ফলনের জন্য সঠিকভাবে সার প্রয়োগ করা
- গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি সেচ দেওয়া
- গাছের অতিরিক্ত শাখা প্রশাখা ছাটাই করা
- গাছের অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় আগাছা পরিষ্কার করে রাখা
গাছের পরিচর্যা করলে গাছও আপনাকে অধিক ফলন দিবে। কিন্তু আপনাকে সঠিক নিয়মে গাছের পরিচর্যা এবং যত্ন করতে হবে। গাছ রোপণ থেকে শুরু করে গাছের ফল পাওয়া পর্যন্ত গাছের পরিচর্যা করতে হবে। যতটুকু প্রয়োজন নিয়ম অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে, প্রয়োজন অনুযায়ী স্প্রে ব্যবহার করতে হবে, গাছের গোড়ায় সেচ প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া ও নানা ভাবে গাছের যত্ন নেওয়া যায় যেমন-গাছের গোড়ার মাটি অতিরিক্ত শক্ত হয়ে গেলে তা উর্বর করে দেওয়া, গাছের সারি পারে পাশে বেষ্টনী দিয়ে বেড়া দেওয়া ইত্যাদি।
উপসংহার
আম অনেক সুস্বাদু একটি ফল। আর এই আম আমরা যে গাছ থেকে সংগ্রহ করি সেই গাছকে যদি অযত্নে অবহেলায় রেখে দেই তাহলে পরবর্তী সময়ে আমের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যাবে। আম গাছে সঠিকভাবে পরিচর্যা এবং যত্ন করলে বছরের পর বছর আম পাওয়া সম্ভব। আম গাছে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে পরিচর্যা করা যায়। ঋতু অনুযায়ী গাছের যত্ন নেওয়া, পোকামাকড় নিয়ন্ত্রন, শাখা প্রশাখা ছাটাই করা সঠিকভাবে সার প্রয়োগ করা, গাছের গোড়ায় পানি সরবরাহ করা, গাছের গোড়ার মাটি উর্বর করে দেওয়া ইত্যাদি গাছের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য এগুলো অত্যন্ত জরুরী। যদি যদি আম চাষিরা সঠিক সময়ে গাছের পরিচর্যা করে তাহলে অবশ্যই তা থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদন সম্ভব।
ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url