মাছ চাষে যেভাবে অধিক লাভবান হবেন
হাস পালনের পদ্ধতি-যেভাবে অধিক লাভবান হওয়া যায় মাছ বাঙালি জাতির প্রাণীর আমি সেই অন্যতম উৎস, সেই সাথে কর্মসংস্থান, বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন এবং পুষ্টি সরবরাহে মাছ চাষের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।
বিভিন্নভাবে মাছ চাষ করা যায় এবং এতে লাভবানও হওয়া সম্ভব। যদি আপনার পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেন। একই পুকুরে নানাজাতের মাছ চাষ করা যেতে পারে যেমনঃ-
- খাল বা ডুবাই মাছ চাষ করা যায়
- বিভিন্ন চৌবাচ্চায় মাছ চাষ করা যায়
- খাঁচায় মাছের চাষ করা যায়
প্রয়োজন শুধু নির্দিষ্ট পরিকল্পনার এবং সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করা। পরিকল্পিত উপায়ে স্বল্প পুঁজি, অল্প সময় এবং লাংসই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এবং সেই মাছের বিভিন্ন নিয়ম প্রাকৃতিক উৎপাদনের চেয়ে অধিক উৎপাদনে চাষ করা সম্ভব। যদি আপনি মাছ চাষের লাভবান হতে চান তাহলে মাছ চাষের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাজার করা পর্যন্ত প্রতিটি পর্বে সেই সমস্ত মাছ চাষীকে বিশেষ কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। আর আমরা সেই সব নিয়ম নেই আলোচনা করব-
মাছ চাষের জন্য পুকুর তৈরি
বর্তমান সময়ে অনেকেই অধিক লাভের আশায় মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তবে মাছ চাষের জন্য সর্বপ্রথম যে অতিক্রম করতে হয় সেটি হল একটি গুণাগুণ সম্পন্ন পুকুর তৈরি। পুকুর হচ্ছে ছোট এবং অগভীর বৌদ্ধ জলাশয়। যেখানে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে মাছ চাষ করা যেতে পারে আবার প্রয়োজন অনুসারে সম্পূর্ণ পুকুর শুকিয়ে ফেলা যেতে পারে। আদর্শ পুকুর হচ্ছে চাষযোগ্য মাছের উপযুক্ত বাসস্থান।
আদর্শ পুকুরে যেসব গুনাগুন থাকা প্রয়োজনঃ-
- পুকুরটি অবশ্যই খোলা জলাশয় বা বন্যা মুক্ত হতে হবে। পুকুরটি যেন বন্যা মুক্ত হয় এই জন্য পুকুরের চারপাশ যথেষ্ট উঁচু করে বাড়তে হবে। পুকুরের মাটি হতে হবে-দো আস পলি দোয়াশ, বা এটেল-দোয়াশ । সারা বছর পানি থাকে এমন পুকুর মাছ চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। এবং পুকুরের গভীরতা হতে হবে শূন্য ০.৭৫ থেকে ২ মিটার।
- পুকুরটি হতে হবে খোলামেলা স্থানে যেন পুকুরে পর্যাপ্ত আলো এবং বাতাস পাই। পুকুরের চারপাশে বড় গাছ লাগানো যাবে না এতে পুকুরে আলো বাতাস পৌঁছাতে বিঘ্ন ঘটবে। পুকুর খোলামেলা স্থানে হলে পুকুরে সালোকসংশ্লেষণ এর হার বেশি হবে এতে মাছের খাদ্য বেশি তৈরি হতে পারবে। পুকুরটি সব সময় উত্তর এবং দক্ষিণ মুখী হওয়া ভালো। এতে পুকুরে সূর্যের আলো বেশি সময় অবস্থান করে। খেয়াল রাখতে হবে যেন পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদা না জমে।
- মাছ চাষের পুকুরের আয়তন ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হলে সবচেয়ে সুবিধা জনক হয়। পুকুরের আকৃতি আয়তাকার হলে জাল টেনে মাছ ধরা সহজ হয়। পুকুরের পারগুলো ১ঃ২ হারে ঢালু হলে সবচেয়ে ভালো অর্থাৎ পুকুরের তলা হতে পুকুরের পার যতটুকু উঁচু হবে পুকুরের তলার দিকে দ্বিগুণ হারে মিশবে।
পুকুর প্রস্তুতিতে সার প্রয়োগ
মাছ চাষের পুকুর প্রস্তুতি করার জন্য আশানুরূপ ফলন পাওয়ার জন্য পুকুরে সার প্রয়োগ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পুকুর প্রস্তুত করার জন্য প্রথমে-
- প্রতি শতকে কম্পোস্ট ১০-১২ কেজি এবং ইউরিয়া ১০০-১৫০ গ্রাম, পিএসপি ৫০-৭৫ গ্রাম।
- পাড় ও তলা এবং পুকুরের চারপাশে ঝোপ জঙ্গল পরিষ্কার করা
- রাক্ষসে মাছ পরিষ্কার (৭-১০ পর্যন্ত বিষক্রিয়া থাকে)
- পুকুরে চুন প্রয়োগ করা
শতক প্রতি পুকুরে মাছ ছাড়ার নিয়ম
মাছ চাষ বাংলাদেশের অন্যতম একটি কৃষি কর্মব্যবস্থা। সঠিক নিয়মে যদি মাছ চাষ করা যায় এবং তার পরিকল্পিতভাবে চাষ করা হয় তাহলে এটি একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়। প্রতি শতকে কেমন হারে মাছ চাষ করা যায় তা নিয়ে আজ আমরা-চিংড়ি, পাবদা, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, কার্প, এবং রুই মাছ ছাড়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করবঃ-
চিংড়ি মাছ ছাড়ার নিয়ম
চিংড়ি মাছ একটি অন্যতম জনপ্রিয় মাছ। চিংড়ি মাছের বেশ কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-বাগদা, গলদা, হরিয়ানা এবং ছাটি। এই মাছগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং এর চাহিদা বাজারে অনেক বেশি। এরা পরিবেশের সাথে খুব সহজে খাপ খায় নিয়ে এদের উৎপাদন হার বৃদ্ধি করে।
- পোনা ছাড়ার ঘনত্ব
প্রতি শতকে১০০/১৫০ টি পোনা ছাড়া যেতে পারে। তবে, পোনা ছাড়ার আগে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে-
পানির গভীরতাঃ ৪-৫ ফুট হতে হবে
পানির গুনাগুন মানঃ PH মাত্রা 6.5 থেকে 7.5 এর মধ্যে থাকতে হবে
খাদ্যঃ পোনা ছাড়ার প্রথমদিকে প্যাকেটজাত খাদ্য ব্যবহার করতে হবে
পাঙ্গাস ছাড়ার নিয়ম
বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি আমিষ জাতীয় খাবার। এই মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং বাজারে এর চাহিদা অনেক। পাঙ্গাস মাছের চাহিদা অনেক বেশি হওয়ায় এবং লাভজনক হওয়ায় অনেকে এখন পাঙ্গাস চাষে আগ্রহী। তবে সঠিক নিয়মে পোনা ছাড়া না হলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া কখনোই সম্ভব না।
- পোনা ছাড়ার ঘনত্ব
পানির গভীরতাঃ ৫ থেকে ৬ ফুট গভীরতা থাকা আবশ্যক
পানির গুনাগুন মানঃ ph মাত্রা ৬.৫ থেকে ৮.৫ এর মধ্যে রাখতে হবে
খাদ্য: প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য অথবা বাড়িতে তৈরি খাদ্য সরবরাহ করতে হবে
- পোনা ছাড়ার সময়
পাঙ্গাস মাছের উৎপাদন সাধারণত ফেব্রুয়ারি এবং এপ্রিল মাসে ভালো হয়। কারণ এই সময়ে পানির তাপমাত্রা মাছের বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত থাকে।
আরো পড়ুনঃ কোয়েল পাখি পালন- যেভাবে লাভবান হবেন
তেলাপিয়া মাছ ছাড়া নিয়ম
তেলাপিয়া মাছ চাষে খরচ কম কিন্তু অল্প সময় অধিক লাভজনক হওয়া সম্ভব। যদি তা হয় সঠিক নিয়মে চাষ করা।
- পোনা ছাড়ার ঘনত্ব
প্রতি শতকে ২০০ থেকে ২৫০ টি তেলাপিয়া মাছের পোনা ছাড়া যেতে পারে, তবে ঘনত্ব নির্ধারণ করার সময় বিশেষ কিছু নিয়ম মাথায় রাখতে হবে তা হল-
পানি প্রবাহঃ তেলাপিয়া মাছের জন্য সামান্য প্রবাহিত পানি বেশ উপযোগী
অক্সিজেন সরবরাহঃ অক্সিজেনের মাত্রা পর্যাপ্ত রাখতে হবে যেন মাছ বৃদ্ধিতে কোন বাধা বিঘ্ন না হয়
খাদ্য সরবরাহঃ শৈবাল এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য সরবরাহ তেলাপিয়া মাছের জন্য সর্বোত্তম
- পোনা ছাড়ার সময়
তেলাপিয়া মাছ বছরে যেকোনো সময় চাষ করা যেতে পারে তবে, গ্রীষ্ম কালে তেলাপিয়া চাষ -ই আদর্শ সময়
কার্প জাতীয় মাছ ছাড়ার নিয়ম
কার্প জাতীয় মাছ তিন প্রকারঃ-কাতলা, মৃগেল এবং সিলভার। এই মাছগুলো সাধারণত মিশ্র চাষের জন্য আদর্শ।
- পোনা ছাড়ার ঘনত্ব
কার্প জাতীয় মাছ প্রতি শতকে ৮০ থেকে ১০০ টি পোনা ছাড়া যেতে পারে।
প্রজাতির নির্ধারণঃ কাতলা,মৃগেল এবং সিলভার সঠিক অনুপাত বজায় রাখা যেমনঃ-৪ঃ৩ঃ৩
পানির গুণমানঃ পুকুরে পর্যাপ্ত জৈব পদার্থ থাকা নিশ্চিত করতে হবে
খাদ্য সরবরাহঃ এই জাতীয় মাছের জন্য প্রাকৃতিক খাদ্য যেমন ফাইটোপ্লাংটন এবং জু প্লাংটন থাকাটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
- পোনা ছাড়ার সময়
বর্ষা শুরুতে অর্থাৎ জুন থেকে আগস্ট মাস এই সময়ে কার্প জাতীয় মাছের পোনা ছাড়ার জন্য আদর্শ।
উপসংহার
বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মৎস্য চাষ। বর্তমান সময়ে মৎস্য চাষ বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে ।জ যদি সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী মাছ চাষ করা যায়্জ তাহলে অবশ্যই মৎস্য চাষের অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। শুধু প্রয়োজনজ পরিকল্পনা্জ মাফিক কাজ করা।
ধন্যবাদ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url